Deed Info

একজন ব্যক্তি কি কি ভাবে জমির মালিক হতে পারেন

একজন ব্যক্তি সাধারণত পাঁচ রকম ভাবে মালিক হয়ে থাকেন 

১) জমি সম্পত্তি ক্রয় করে, 

২) পূর্বপুরুষ এর ওয়ারীশ সূত্রে, 

৩) সরিক গণের নিকট হইতে বন্টন দলিল মূলে সম্পত্তি প্রাপ্ত, 

৪) দানপত্র বা হেবানামা দলিল মূলে

৫) উইল বা ওশিয়াত দলিল মূলেআরও অন্য করন ও হতে পারে তবে এই পাঁচটি উল্লেখযােগ্য

জমির মালিকানা যেভাবে যাচাই করবেন।

জমি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন? ভাবছেন খুব ভালো জমি। দরদামও আয়ত্তের মধ্যে। জমি কেনার দলিল সম্পাদন করে নিলেই হলো। জমির মালিক হয়ে যাবেন। কিন্তু তড়িঘড়ি করে কিনতে গিয়ে বিপদেও পড়তে পারেন।
জমি কেনার আগে জমির ক্রেতাকে জমির বিভিন্ন দলিল বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে জমির মালিকের মালিকানা বৈধতা ভালো করে যাচাই করতে হবে। অন্যথায় জমি কিনতে গিয়ে বিপদের শিকার হতে হবে। কিংবা জমির মূল অংশ থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে।
জমির বিভিন্ন ধরনের দলিল থাকতে পারে। বিক্রয় দলিল থেকে শুরু করে ভূমি উন্নয়ন কর খতিয়ান সবই হচ্ছে দলিল। ক্রেতাকে প্রথমেই দেখতে হবে সবশেষে যে দলিল করা হয়েছে, তার সঙ্গে আগের দলিলগুলোর মিল আছে কি না।
বিশেষ করে, ভায়া দলিলের সঙ্গে সামঞ্জস্য আছে কি না, দেখতে হবে। ভায়া দলিল হচ্ছে মূল দলিল, যা থেকে পরের দলিল সৃষ্টি হয়।
হস্তান্তর করা দলিলে দাতা এবং গ্রহীতার নাম, ঠিকানা, খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর, মোট জমির পরিমাণ ভালো করে দেখতে হবে। আরেকটি বিষয় খেয়াল করতে হবে, যে ভায়া দলিল থেকে পরবর্তী দলিল করা হয়েছে, তাতে প্রতি দাগের হস্তান্তরিত জমির পরিমাণ ঠিক আছে কিনা। অনেক সময় আগের দলিলের চেয়ে পরের দলিলে বেশি জমি দেখানো হয়।
খতিয়ানের ক্ষেত্রে আগের খতিয়ানগুলোর সঙ্গে সর্বশেষ খতিয়ানের মিল আছে কি না, তা মিলিয়ে দেখতে হবে।
মিউটেশন বা নামজারির মাধ্যমে যে খতিয়ান তৈরি করা হয়েছে, সে মতো খতিয়ানে দাগের মোট জমির পরিমাণ এবং দাগের অবশিষ্ট পরিমাণ যোগ করতে হবে। এই যোগফল কোনো দাগে মোট যে পরিমাণ জমি আছে, তার চেয়ে কম না বেশি, তা দেখা দরকার। 
যদি বেশি হয়, তবে অতিরিক্ত জমির মালিকানা কোনোভাবেই দাবি করা যাবে না। দেখতে হবে মিউটেশন বা নামজারি করা হয়েছে কি না এবং নামজারি যদি না হয় তাহলে কী কারণে হলো না তা জানতে হবে। মিউটেশন না করা থাকলে জমি কিনতে সমস্যা হবে।
খেয়াল রাখতে হবে, দাগ নম্বরে সর্বমোট যে পরিমাণ জমি আছে, তার সঙ্গে আগের দলিলগুলোর মিল আছে কি না। জমি যাঁর কাছ থেকে কিনবেন তিনি কীভাবে জমির মালিক হয়েছেন, তা দেখতে হবে। 
ক্রয়সূত্রে, ওয়ারিশমূলে, দান বা হেবামূলে যেকোনো উপায়েই হোক না কেন, প্রতিটি ক্ষেত্রেই উপযুক্ত দলিল যাচাই-বাছাই করে নিতে হবে। পাওয়ার অব অ্যাটর্নি মূলে যদি কেউ কোনো জমি বিক্রি করতে চান তাহলেও মূল মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা এবং তাঁর কাছ থেকে প্রকৃত তথ্য জেনে নেওয়া উচিত। 
যেকোনোভাবেই হোক না কেন, জমির মালিকানা যাচাই না করে জমি কেনা বোকামি। অনেক সময় জমিজমা প্রকৃত তথ্য গোপন করেও অনেকে জমি বিক্রি করে দেন। তাই মালিকানা-সংক্রান্ত বিরোধের বিষয়টি জেনে নেওয়া জরুরি। 
বিশেষ করে আশপাশের লোকজনদের কাছ থেকে জমি নিয়ে তথ্য নেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। অনেক সময় জমি নিয়ে অগ্রক্রয়ের দাবিও হতে পারে। তাই পার্শ্ববর্তী জমির মালিক অগ্রক্রয়ের দাবিদার কি না, তা খুঁজে বের করতে হবে। 
ক্রেতা নিজেকেই মালিকানা-সংক্রান্ত বিষয়ে ভালোভাবে খোঁজখবর নিয়ে কিংবা যাচাই-বাছাই করে জমি কিনতে হবে। 
জমি সম্পত্তি সমন্ধে প্রতিনিয়ত জানতে আমাদের এই হোয়াটস অ্যাপ লিঙ্ক টিকে ক্লিক করুন

দলিলে উল্লেখিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা গুলোর অর্থ

দলিলে ও খতিয়ান এ লিখিত অনেক শব্দ আছে,যার সংক্ষিপ্ত রুপ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এমন কিছু শব্দ আছে যা খুব কম ব্যবহার হয়। যারা পুরাতন দলিলের ব্যবহৃত শব্দের অর্থ বোঝেন না,তাদের জন্য বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
যেমন, 
👉 খং : খতিয়ান।                                                                    
👉 গং : আরো অংশীদার আছে।
👉 দং : দখলদার।
👉 জং দং : জবর দখল 
👉 পিং :  পিতা। 
👉 জং : স্বামী। 
👉 মৌজা : গ্রাম।
👉 সাবেক : আগের/পূর্বের ।
👉 হাল : বর্তমান।
👉 দাগ নং : জমির নম্বর।
👉 সাং : সাকিন/গ্রাম।
👉 জে এল নং : মৌজা নং/গ্রাম নম্বর।
👉 হিস্যা : অংশ।
👉 এজমালী : যৌথ।
👉 বাটোয়ারা : বন্টন।
👉 বায়া : বিক্রেতা।
👉 মং :  মবলগ/মোট।
👉 ফর্দ : দলিলের পাতা।
👉 দাখিলা : খাজনার রশিদ।
👉 চৌহদ্দি : সীমানা।
👉 বং : বাহক ।
👉 তালুক : নিম্নস্থ স্বত্ত্ব।
👉 তরমিম : শুদ্ধকরণ।
👉 তরতিব : শৃংখলা।
👉 দর পত্তনী : পত্তনীর অধীন।
👉 দরবস্ত : সমুদয়।
👉  নথি : রেকর্ড।
👉  নিং : নিরক্ষর।
👉  বিং : বিস্তারিত।
👉 বাস্তু : বসত ভিটা।
👉 একুনে: যোগফল।
👉 গির্বি : বন্ধক।
👉 নক্সা :  ম্যাপ।
👉 জরিপ : পরিমাণ।
👉 নাল : চাষাবাদের উপযোগী ভূমি।
👉 কান্দা : উচ্চ ভূমি। 
👉 মৌকুফ : মাপ।
👉 খিরাজ : কর, খাজনা।
👉 তঞ্চকতা : প্রতারণা।
👉 অধুনা : বর্তমান।
👉 রোক : নগদ।
👉 আসলি : মূল ভূমি।
👉 সমূদয়: সব কিছু।
👉 ইজারা : ঠিকা।
👉 পত্তন : সাময়িক বন্দোবস্ত।
👉 তফসিল : বিক্রিত জমির তালিকা।
👉 দিয়ারা : পলিমাটি দ্বারা গঠিত চর।
👉 খসড়া : জমির মোটামুটি বর্ণনা।
👉 জমা বন্দী : খাজনার তালিকা।
👉 মিদং : মাধ্যমে
👉 পত্র মিদং : পত্রের মাধ্যমে।
👉 দিশারী রেখা : দিকনির্দেশনা।
👉 ইয়াদদন্ত : স্মারকলিপি।
👉 ইন্তেহার : ঘোষণাপত্র।
👉 খানে খোদা : মসজিদ।
👉 টাভার্স : ঘের জরিপ। 
👉 এতদ্বার্থে : এতকিছুর পর।
👉 স্বজ্ঞানে : নিজের বুঝ মতে।
👉 মুসাবিদা : দলিল লেখক।
👉 সনাক্তকারী : যিনি বিক্রেতাকে চিনে।
👉 ভায়া : বিক্রেতার পূর্বের ক্রয়কৃত দলিল।

জমি কেনা আগে কমপক্ষে ২৩ প্রশ্নের উত্তর যথাযথভাবে না পেলে জমি কেনা উচিত নয় । সেসব প্রশ্নগুলো হলো :

১। বিক্রেতার মালিকানা সঠিক আছে কি না?
২। সম্পত্তিতে বিক্রেতার দখল আছে কি না?
৩। হাল রেকর্ড অনুযায়ী খতিয়ান ও দাগ নম্বর সঠিক আছে কি না?
৪। হাল রেকর্ড ও সাবেক রেকর্ড এর মধ্যে মিল রয়েছে কি না?
৫। হিস্যা মোতাবেক বিক্রেতার প্রাপ্য অংশ সঠিক আছে কি না?
৬। রেন্ট সার্টিফিকেট মামলায় জড়িত সম্পত্তি কি না?
৭। হাল সন পর্যন্ত ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) পরিশোধ আছে কি না?
৮। বিক্রেতার নামে নামজারি করা আছে কি না?
৯। অর্পিত/পরিত্যক্ত/অধিগ্রহণকৃত সম্পত্তি কি না?
১০। সরকারি কোন প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি কি না?
১১। নৃ-তাত্ত্বিক জাতি গোষ্ঠীর সম্পত্তি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের “বিক্রয় অনুমতিপত্র” আছে কি না?
১২। খাস জমি কি না?
১৩। বিক্রিত জমিতে সরকারি কোন স্বার্থ জড়িত আছে কি না?
১৪। সর্বসাধারণের ব্যবহার্য বা পাবলিক ইজমেন্ট সম্পত্তি কি না?
১৫। নাবালকের সম্পত্তি কি না?
১৬। নাবালকের সম্পত্তি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে আইনগত অভিভাবক বা আদালত কর্তৃক নিযুক্ত অভিভাবক নির্ধারণ করা আছে কি না?
১৭। বিক্রেতা সম্পত্তি উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্য হইলে নিবন্ধিত বণ্টননামা দলিল আছে কি না?
১৮। সম্পত্তি বিক্রয়/হস্তান্তর এর ক্ষেত্রে আদালতের নিষেধাজ্ঞা আছে কি না?
১৯। নকশা মোতাবেক জমির অবস্থান ও পরিমাণ সঠিক আছে কি না?
২০। দলিলে বর্ণিত তফসিল অনুযায়ী রেকর্ড সঠিক আছে কি না?
২১। সম্পত্তি বন্ধক দেয়া আছে কি না?
২২। বিক্রেতা বায়না বা বিক্রয় চুক্তি সম্পাদন করেছেন কি না?
২৩। বিক্রেতার প্রদর্শিত খতিয়ান ও দলিল সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসে রক্ষিত রেকর্ডপত্রের সাথে মিল আছে কি না?

 জমি সম্পত্তি রেজিস্ট্রি প্রতারণা থেকে বাঁচার জন্য কিছু বিষয়

     ১।  জমি সম্পত্তি বা ফ্ল্যাট  দুই রকমের মূল্য হয় একটাকে বলা হয় সরকারি মূল্য বা মার্কেট ভ্যালু যে মূল্যটা সরকার নির্ধারণ করে,  অন্যটি হল কোবলা মূল্য বা ফোর্থ ভ্যালু যেটা ক্রতা ও বিক্রতার মধ্য নির্ধারণ হয় আপনাদেরকে অবশ্যই ক্রেতা ও বিক্রেতার যে মূল্য অর্থাৎ কবলা মূল্য তার উপর লক্ষ রাখতে হবে, যদি কোন কারনে সম্পত্তি বা ফ্ল্যাট ক্রয়ের পর আপনি সম্পত্তি বা ফ্ল্যাট মালিকের কাছ থেকে কোন কারনে আপনার কেনা সম্পত্তি থেকে বেদখল হন তা হলে  ঐ কবলা দলিলে যে কবলা মূল্য উল্লেখ থাকবে সেই টাকা সুদ সহ ফেরত দিতে বিক্রেতা বাধ্য থাকবে  

     ২) আর অবশ্যই ভালো ভাবে মালিকানা যাচাই করবেন অর্থাৎ যিনি সম্পত্তি বা ফ্ল্যাট বিক্রয় করছেন,তিনার কি বিক্রয় করিবার অধিকার আছে না নেই 

    ৩) আর দলিল দাখিলের করার আগে বিক্রেতার পাওনা টাকা বা সম্পত্তির পণমূল্যের সম্পূর্ণ টাকা ক্রেতাকে মিটিয়ে ফেলতে হবে, তবে বিক্রতা দলিল সম্পাদনের আগে পণমূল্যের সম্পূর্ণ টাকা যদি দাবি করে সে ক্ষেত্রে টাকা দেওয়া যাবে না  

     ৪) ক্রেতাকে দাগ নাম্বার,খতিযান নাম্বার, মৌজা এবং কোন দাগ থেকে কতটা পরিমান সম্পত্তি ক্রয় করেছেন এবং পর্চা বা রেকর্ডের অংশ অনুযায়ী বিক্রেতার সেই পরিমাণ সম্পত্তির মালিক আছে না নেই লক্ষ রাখতে হবে

জমি সম্পত্তি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই লক্ষনিয় কিছু বিষয়  

১) সম্পত্তি বিক্রেতা ক্ষেত্রে অবশ্যই লক্ষনিয় বিষয় হল দলিল দাখিল করার আগে অবশ্যই পড়ে দেখবেন, বিশেষ করে ক্রেতা বিক্রেতা নাম এবং তপশীল চৌহদ্দি অবশ্যই পড়বেন

২) আর দলিল দাখিল করার আগে বিক্রেতার পাওনা টাকা বা সম্পত্তির পণমূল্যের সম্পূর্ণ টাকা দিয়ে দিতে হবে বা ক্রেতাকে মিটিয়ে ফেলতে হবে    

৩) বিক্রতাকে দাগ নাম্বার ,খতিযান নাম্বার, মৌজা এবং কোন দাগ থেকে কতটা পরিমান সম্পত্তি বিক্রয় হচ্ছে তা লক্ষ রাখতে হবে ইত্যাদি সব ঠিক আছে তা ভাবে দেখে নিতে হবে

৪) ক্রেতা কোন সম্পত্তির বায়না দিয়েছেন এবং সেই সম্পত্তির বায়নানামা দলিলে উল্লেখিত সময়ের পরেও তিনি সম্পত্তি রেজিষ্ট্রী করে নিচ্ছে না, সেক্ষেত্রে বিক্রেতা  ক্রেতার বিপক্ষে আইনত ব্যবস্থা নিতে পারেন 

৫) ক্রেতাকে সম্পত্তির দখল বুঝিয়ে দিতে হবে